ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে?
ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত একটি মহামারী বা ছোঁয়াচে রোগ হয়। এটি বেশ সহজেই ছড়ায় এবং প্রতিষ্ঠান করতে পারে যেখানে এডিস মশা অথবা টাইগার মশা (Aedes aegypti বা Aedes albopictus) রয়েছে। এই মশারা মানুষের রক্ত চোষা দ্বারা ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।
যখন একজন ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন সে জ্বর সংক্রান্ত লক্ষণগুলি দেখায়, যেমন উঁচু জ্বর, মাংশপেশি ব্যথা, মাথায় ব্যাথা, চোখে লালচে বা সাদা রঙের চাপ বা ছিদ্র ইত্যাদি। এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর সংক্রান্ত অন্যান্য লক্ষণগুলি হতে পারে, যেমন শরীরের ব্যথা, হাল্কা বা মাঝারি শ্বাসকষ্ট, শরীরের অল্প কালের প্রস্রাব ইত্যাদি।
ডেঙ্গু জ্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হতে পারে এবং কম লাক্ষ্যমাত্রার মানে হতে পারে জীবনদ্রব্য ক্ষতি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের সম্ভাবিত লক্ষণগুলি দেখে তা নির্ণয় করে তারপরে উচ্চারণ ও চিকিত্সা নিয়ে যাওয়া উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসের উদ্ভব হয়ে থাকে যা মশারী জীবাণু Aedes aegypti দ্বারা ছড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপকভাবে প্রভাবিত দেশগুলিতে খুব সাধারণভাবে পাওয়া যায়, এসব দেশের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতোই হতে পারে, যেমন শরীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে, শরীরে মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা এবং পানিতে চোখের লালচে বা তালুতে লালচের উপসর্গ হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর দুই ধরণের হয়ে থাকে - সাধারণ ডেঙ্গু এবং হেমর্হেজিক ডেঙ্গু। হেমর্হেজিক ডেঙ্গু মারাত্মক হতে পারে এবং সাধারণ ডেঙ্গুর চেয়ে সহজেই জ্বর কমাতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
নিম্নলিখিত কিছু পরামর্শ মেনে চললে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যেতে পারে:
1. মশারী জীবাণু বিষশীত এলাকাগুলি থেকে দূরে থাকা: মশারী জীবাণুর সংখ্যা কমাতে হলে সকল পানির জলাভূমি স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে হবে। পানির পাত্রগুলি বন্ধ রাখা এবং জলাভূমিতে মশারী জীবাণু ছড়ানোর জন্য মশারী নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
2. সঠিক পোশাক ব্যবহার করা: ডেঙ্গু মশারী আমাদের ত্বকের উপর উভয় ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে। সুরক্ষার জন্য সম্ভবত একটি পরিপ্রেক্ষিত পোশাক, যেমন পাঁজামা বা শাড়ি পরিধান করা যেতে পারে।
3. মশারী নিয়ন্ত্রণ উপায় গ্রহণ করা: মশারী নিয়ন্ত্রণের জন্য সম্ভবত উপযুক্ত মধ্যম হতে পারে মশারী নেট, মশারী রিপেলেন্ট ব্যবহার করা ইত্যাদি।
4. সচেতনতা সম্পর্কে বিশেষ দৃষ্টিতেই দুর্বল অবস্থায় ব্যক্তিগত সতর্কতা পালন করা: অস্বাস্থ্যকর সংক্রান্ত লক্ষণ পরেন বা ভাইরাসের প্রভাবিত এলাকায় ঘুরতে গিয়ে বিশেষত নিঃসঙ্কোচে সবুজ ও জলাভূমিতে মশারী জীবাণুতে ছড়িয়ে পড়লে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিত্সার পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত, অভিজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ ও পরিপ্রেক্ষিত চিকিত্সা সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের চিকিত্সা নিয়ে করা হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি নিম্নরূপঃ
1. উচ্চ তাপমাত্রা: ডেঙ্গু জ্বরের মাত্রা আরোহণ করে এবং সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা (প্রায় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৯ সেলসিয়াস) উপস্থাপন করে।
2. মাথাব্যথা এবং শরীরে ব্যাথা: ডেঙ্গু জ্বরে মাথার পিছনে ব্যথা ও মাথার দিকে তেজ ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা সম্ভব যেমন মাস্তিষ্ক, হাড়, মাংসপেশী ইত্যাদি।
3. শরীরে ক্ষুদ্র লালচ: ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের চিকন স্থানে ক্ষুদ্র লালচ অথবা বাদামী লালচ দেখা যেতে পারে। সাধারণত এটি হাতের পিঠে, পায়ের গায়ে বা মুখের পাশে দেখা যেতে পারে।
4. চোখের লালচ: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখের পুতুলসী বা লালচ দেখা যেতে পারে। চোখের সবুজ অংশে লালচ গঠন হতে পারে।
5. শরীরের পুতিগল্পের ক্ষত: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পুতিগল্পের ক্ষত হতে পারে। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘাম বা পিপাসার ক্ষত হিসেবে প্রকাশ করতে পারে।
6. শরীরের শীতলতা ও অবস্থানের অপসারণ: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি শরীরের শীতলতা অনুভব করতে পারে এবং শরীর বমিলে নামার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্নতা দেখাতে পারে এবং লক্ষণগুলির মাত্রা ও উপস্থিতি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিবর্তন করতে পারে। যদিও এই লক্ষণগুলি ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলি হলেও, ডেঙ্গু জ্বর নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করার জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত করণীয়গুলি মেনে চলা উচিত:
1. চিকিত্সা পরামর্শ গ্রহণ করুন: ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি অনুসরণ করলে আপনাকে প্রাথমিক চিকিত্সা পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। একজন নিদের্শক চিকিত্সকের সাথে আপনি কথা বলুন এবং পরামর্শ ও সেবা পান যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করুন।
2. শরীরে সুযোগ দিন: ডেঙ্গু জ্বরের সময়ে শরীরের সঠিক বিশ্রাম এবং স্নান নিশ্চিত করুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে দেখতে সাহায্য করতে পারে উচিত।
3. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ডেঙ্গু জ্বরে শরীর বিশেষ করে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যেন শরীর পর্যাপ্তভাবে হাইড্রেটেড থাকে।
4. প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করুন: ডেঙ্গু জ্বরের চিকিত্সা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ও
ষুধের প্রয়োজনীয়তা থাকে। যদি চিকিত্সক মনোনিবেশ করে থাকেন তবে আপনাকে প্রেসক্রিপশন করা ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
5. পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করুন: ডেঙ্গু জ্বর সংক্রান্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে সাহায্য করুন। উদাহরণস্বরূপ, মশারী নিয়ন্ত্রণ করতে অন্যদের উপস্থাপন করুন এবং সাবধানে রাখুন যেন তারা ডেঙ্গু মশারীর উত্সাহিত এলাকায় বেড়ানো না করে।
6. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: সঠিক পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন আপনার শরীর স্বাস্থ্যকর থাকে এবং পুষ্টি প্রাপ্ত করে। মাংশ, মাছ, ডাল, ফল, সবজি ইত্যাদি যেমন পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও, আপনাকে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে এবং চিকিত্সায় প্রদত্ত নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। আপনার পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য অবস্থা উন্নত করতে চিকিত্সকের সাথে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখুন।
ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের কতটি সেরোটাইপ আছে ?
ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের সাধারণত ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে, যারা হলেন ডেঙ্গু ভাইরাস এসেরোটাইপ 1 (DENV-1), ডেঙ্গু ভাইরাস এসেরোটাইপ 2 (DENV-2), ডেঙ্গু ভাইরাস এসেরোটাইপ 3 (DENV-3) এবং ডেঙ্গু ভাইরাস এসেরোটাইপ 4 (DENV-4)। এই চারটি সেরোটাইপ ভাইরাসের মধ্যে পারস্পরিক ভিন্নতা রয়েছে এবং এদের আক্রান্ত করার জন্য মানব জটিল প্রতিরোধ উত্পাদন করতে হয়।
ডেঙ্গু জ্বর কোন ধরনের মশার মাধ্যমে ছড়ায়?
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি প্রধানত এডিস মশার (Aedes aegypti) এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস (Aedes albopictus) মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশারা সাধারণত পরিবারিক পরিবেশে থাকে এবং মানুষের কাছে বর্ণিত সময়ে অতি সচেতনতার সাথে বিষয় হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির রক্তে ভ্যাইরাস থাকলে, যখন এই মশারা অন্তর্গত মশারকে কামড়ে, সেই সময় মশারগুলি আক্রান্ত ভ্যাইরাস ধারণ করে এবং অন্য মানুষের রক্তে ছড়িয়ে দেয়। এই ভ্যাইরাস পরিবেশে প্রচুর সময়ে জীবিত থাকতে পারে না, তবে মশারগুলি যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে এবং মানুষের কাছে পূর্ণাঙ্গ ভিন্নতা থাকে, তবে তারা ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের টেস্টের নাম
ডেঙ্গু জ্বরের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত টেস্ট হলো "ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা" বা "ডেঙ্গু জ্বরের ডায়াগনস্টিক টেস্ট"। এই টেস্টগুলির মধ্যে সাধারণত প্রযোজ্য হয় "ডেঙ্গু ভাইরাস এন্টিবডি টেস্ট" ও "পলিমারেজ শক্তি সংযোগকারী রিএকশন (Polymerase Chain Reaction, PCR)"। ডেঙ্গু ভাইরাস এন্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে মহুর্তে রক্ত বা সেরাম নমুনা নিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের এন্টিবডির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপরে ডেঙ্গু জ্বরের নিশ্চিত রোগীত্ব জানার জন্য পলিমারেজ শক্তি সংযোগকারী রিএকশন (PCR) পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা হিসাবে ডেঙ্গু ন্যাসাগেনল প্রোটিন এলিসা পরীক্ষাও ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষতিকারক টাইপ বা সেরোটাইপ সনাক্ত করা হয়।
তবে, ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য এবং পরীক্ষার বিশদ সম্পর্কে আপনার চিকিত্সকের সাথে আলাপ করা উচিত, যাতে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন