রাজধানী ঢাকার ফুটপাতে দখল, চাঁদাবাজি, উৎপাত– সবই আছে আগের মতো
আরামে হাঁটার জন্য রাজধানী ঢাকার মোটামুটি সব সড়কের পাশেই আছে ফুটপাত। তবে কোনো সরকারের আমলেই হেঁটে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি রাজধানীবাসী। হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ঢাকার ফুটপাতের ‘চাবি’ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে। সেখানকার অবৈধ দোকানের ভাড়ার টাকা গুনতেন সরকারদলীয় নেতারা। এমনকি টাকার ভাগ যেত পুলিশের পকেটেও। শক্তি হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যে যার মতো পালালেও ফুটপাতজুড়ে এখনও আছে সারি সারি দোকান, আছে নানা স্থাপনা। তবে এখনকার দখলবাজ কারা?
অনুসন্ধান বলছে, রাজধানী ঢাকার ফুটপাতে দখল, চাঁদাবাজি, উৎপাত– সবই আছে আগের মতো। শুধু বদলেছে কুশীলব। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মিলেছে বেশির ভাগ দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে দখল-চাঁদাবাজির বিষয়ে নেওয়া হয়েছে শূন্য সহনশীল নীতি। এসব অপকর্মে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে বহিষ্কারও করেছে দলটি। তবু অনেক এলাকায় ফুটপাত দখল-চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী। রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ফুটপাতের দখল ও নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হয়েছে। নতুনভাবে ভাগাভাগিতে ব্যস্ত নতুন দখলদাররা। তবে দলটির শীর্ষ নেতাদের হুঁশিয়ারিতে কিছু কিছু এলাকা এখনও চাঁদামুক্ত আছে বলে মনে করেন ফুটপাত দোকানিরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ফুটপাত ও সড়ক দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকাতেই মানুষের চলার পথ সংকুচিত হয়ে বেড়েছে যানজট। কোথাও অবৈধ স্থাপনা, আবার কোথাও বিভিন্ন মালপত্র রাখার কারণে অনর্থক কষ্টে পড়ছেন পথচারী। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নেমে হাঁটতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের যেমন দৃষ্টিপাত নেই, তেমনি চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও নেই হেলদোল।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার ফুটপাতের দৈর্ঘ্য ৪৩০ কিলোমিটার। সেখানে অন্তত তিন লাখ হকার ব্যবসা করেন। প্রভাবশালীরা তাদের কাছে থেকে বছরে চাঁদা তোলে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির টাকা যায় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি আর লাইনম্যানের পকেটে।
নিউমার্কেট এলাকায় ‘নিউম্যান’ : রাজধানীর গাউছিয়ার কাছাকাছি এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাতে মো. সুমন ধুমসে ব্যবসা চালিয়ে গেছেন ১৫ বছর। সেপ্টেম্বরে হারিয়েছেন তিন দোকানের দুটিরই দখল। বাকি দোকানটিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি পেয়েছেন। সুমনের ভাষ্য, নিউমার্কেট থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কে এম চঞ্চলের লোকজন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে তাঁর দুটি দোকান দখলে নিয়েছেন। যুবদলকর্মী ফরহাদ, হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন এই দখল প্রক্রিয়ায় জড়িত। দুই দোকান এখন বিএনপিকর্মী দুলালের নিয়ন্ত্রণে। যুবদলকর্মী হাসান সুমনকে ফোন করে বাকি দোকান ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। দোকান না ছাড়লে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন হাসান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কে এম চঞ্চল বলেন, ‘দোকান দখলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এখানে যুবদলের তিনটি গ্রুপ আছে। হয়তো অন্যরা গেছে।’
এর আগে নিউমার্কেট এবং আশপাশ এলাকার ফুটপাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন নিউমার্কেট থানা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম লিটন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন ইবু, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএস রানা, নিউমার্কেট হকার্স লীগের সভাপতি মনির ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ছৈইয়া।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, এলিফ্যান্ট রোড থেকে গাউছিয়া মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে অন্তত ৪০টি নতুন দোকান বসানো হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে রাস্তার ওপর তোয়ালে বিক্রির দোকান পেতেছেন আবদুল মান্নান। দুপুরে তাঁর ছেলে আবু সাইদ বেচাকেনা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকর্মী দুলালের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ দিন আগে দোকানটি দিয়েছি।’
গ্রীন স্মরণিকা শপিংমলের সামনে নতুন সাতটি দোকান বসেছে। এর মধ্যে একটিতে মেয়েদের পোশাক বিক্রি হয়। বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দোকান বসিয়েছি। তিনি কোনো নেতাকে ধরে দোকান বসানোর ব্যবস্থা করেছেন, তা জানি না।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের নিয়ন্ত্রণে। হকার্স মার্কেট থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত এলাকা রয়েছে নিউমার্কেট থানা যুবদল সভাপতি নিজাম বেপারির কবজায়। তাঁর নিজেরও ফুটপাতে সাত থেকে আটটি দোকান রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ নিলেও এসব এলাকায় এখনও নিত্য চাঁদাবাজির উৎপাত শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুন নতুন দোকান বসানো হয়েছে। ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত ব্যবসায়ী শহীদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে এখনও কেউ চাঁদা দাবি করেনি।’
নূরজাহান মার্কেটের সামনের এক পোশাক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু না হলেও নতুন দোকান বসানো হচ্ছে। কারও কারও দোকান দখলেরও চেষ্টা চলছে।
ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমি দোকান নিয়ন্ত্রণে নিইনি। চাঁদাবাজি যাতে না হয়, খেয়াল রাখছি। কাউকে চাঁদা না দিতে ব্যবসায়ীদের নিষেধ করে দিয়েছি। ফুটপাতের ব্যবসায়ী দরিদ্র মানুষ। যা আয় করবে, সবটাই তাদের।’ নিউমার্কেট থানা যুবদল সভাপতি নিজাম বেপারি বলেন, ‘নিউমার্কেট থানার ওসিসহ আমরা প্রতিটি দোকানে গিয়ে বলেছি, কেউ চাঁদাবাজি করতে এলে ধরিয়ে দিতে।’
নতুন দোকান মতিঝিলে
মতিঝিল এলাকার ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটপাতে দোকানের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা নতুন করে শার্ট-গেঞ্জিসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান বসিয়েছেন। তবে দোকানের মালিকের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। শাপলা চত্বর এলাকার ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁর দোকানের সামনে শার্টের নতুন দুটি দোকান বসেছে। ওই দুটি দোকানের শার্ট বিক্রেতার কাছে দোকানের মালিক বিষয়ে জানতে চাইলে তারা নাম বলতে রাজি হননি। মতিঝিল পূবালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় গেঞ্জি বিক্রেতা আবুল বাশার জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে মতিঝিল এলাকায় ব্যবসা করছেন। প্রতিদিনই চাঁদা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ তাঁর কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন আমীর নামে এক লাইনম্যান। ৫ আগস্টের পর চাঁদা বন্ধ রয়েছে।
ফুটপাতে ভাতের হোটেল
গত বুধবার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এজিবি কলোনিসংলগ্ন (হাসপাতাল জোন) ফুটপাতে বাঁশের খুঁটির ওপর ত্রিপল টানানো। এর নিচে লম্বা করে পাতানো বেঞ্চ-টেবিল। বেঞ্চে বসে খাওয়া-দাওয়া করছে মানুষ। পাশেই দুটি গ্যাসের চুলা। একটিতে রান্না হচ্ছে ভাত, অন্যটিতে মাছ। কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোটেলটি তৈরি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড (এজিবি কলোনি এলাকা) শ্রমিক দলের সভাপতি নীলুসহ পাঁচজন। হোটেলটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন শ্রমিক দলনেতা আজমত। একই ফুটপাতে স্থানীয় বিএনপি নেতা সুমনের অনুসারীরা নতুন করে বাঁশের খুঁটির ওপর ত্রিপল টানিয়ে আরেকটি দোকান তুলেছেন। এটিও হবে ভাতের হোটেল। এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী এই ফুটপাতে আরও কয়েকটি দোকান তুলেছেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের ফুটপাতটি এক যুগ ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন সাইফুল মোল্লা। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেটি দখলে নেন স্থানীয় বিএনপি নেতা সোহেল, মাসুদ ও জুয়েল।
টিঅ্যান্ডটি কলোনিসংলগ্ন ফুটপাতেও নতুন করে একাধিক ভাতের হোটেল বসেছে। টিঅ্যান্ডটি কলোনির বাসিন্দারা জানান, ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতার কয়েকজন অনুসারী এই হোটেলগুলো তুলেছেন।
এদিকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের ফুটপাতে আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে। তবে নিয়ন্ত্রক ও লাইনম্যান ভিন্ন। আইডিয়াল স্কুলের সামনের ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীদের দখলে। এ ছাড়া শুক্রবারে কথিত ‘হলিডে মার্কেট’ বসে। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সাইফুল মোল্লা। চাঁদার টাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও দলটির সংগঠনের নেতা এবং পুলিশকেও ভাগ দিতেন তিনি। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি চাঁদাবাজি করছিলেন। ৫ আগস্টের পর এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এখন তারা চাঁদাবাজি করছেন। এক ডাব বিক্রেতা জানান, তিনি আগেও দিনে ১৫০ টাকা চাঁদা দিতেন, এখনও তাই-ই দিচ্ছেন। ফুটপাতে নতুন করে দোকান বসানো হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও বিপরীত পাশের ফুটপাত দখল করে দোকান গড়ে ওঠার কারণে স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া শুক্রবার পুরো সড়ক দখল করে দোকান বসানোর কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
গুলিস্তানে কিছুটা স্বস্তি
গুলিস্তান এলাকার ২৫ দোকানির সঙ্গে গত বুধবার একে একে কথা হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে রাস্তার ওপর শার্টের দোকান নিয়ে বসেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, আগে তিনি দিনে ১০০ টাকা চাঁদা দিতেন। সাইফুল নামে একজন চাঁদার টাকা তুলতেন। ৫ আগস্টের পর থেকে কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আর কখনও যেন চাঁদাবাজির শিকার হতে না হয়। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিষয়টি যেন মাথায় রাখে। আমরা গরিব মানুষ। ফুটপাতে বেচাকেনা করে সংসার চালাই।’
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনের খেলনা বিক্রেতা আবদুল গফুর জানান, তিনি প্রতিদিন ২০০ টাকা চাঁদা দিতেন। তবে এখন তা থেকে মুক্ত আছেন। পুলিশও বিরক্ত করে না। তিনি বলেন, আগে চাঁদা না দিলে দোকান তুলে দেওয়া হতো। সে পরিস্থিতি যেন আর সৃষ্টি না হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে গুলিস্তান এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন দুলাল ওরফে মাদারীপুর দুলাল, শাহীন, আমীর, বাসু, সেলিম, তছলিম, লিপু, সুলতান, কাদের, রহিম, সালাম ও আকবর।
ঢাকার অন্য এলাকা কেমন
গ্রিন রোডে দেখা যায়, ফুটপাতে নতুন করে বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। তবে এসব দোকান থেকে এখনও কেউ চাঁদা নিচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন দোকানিরা। শুক্রবার গ্রিন সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতের একটি মিনি হোটেলের মালিক বাবুল মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার তিনি নতুন এই দোকান বসিয়েছেন।
একই এলাকার এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, আগে ফুটপাতে নতুন করে দোকান বসাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের অনুমতি নিতে হতো। টাকা দিলে দোকান বসানো যেত। তবে ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি বন্ধ আছে। যে কারণে অনেকেই নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন।
মিরপুর ১ নম্বর এলাকার কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি চলত। এখন কবির নামে এক চাঁদাবাজ মাঝেমধ্যে চাঁদা তোলার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কবির গোলচত্বরের একাংশ এলাকার চাঁদার টাকা তুলে নেতা এবং সংশ্লিষ্ট থানা ও বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করতেন। পরবর্তী পরিস্থিতিতে চাঁদা তোলার দায়িত্ব নিতে কবির স্থানীয় বিএনপি-যুবদলের কিছু নেতার সঙ্গে মেশার চেষ্টা করছেন।
কারা কী বলছেন
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে। এখানে দুর্বৃত্তের কোনো স্থান নেই। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই অপকর্মের চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের দোসর। যারা বিএনপির রূপ ধারণ করে কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী মীর খাইরুল আলম বলেন, ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পেছনে অনেক বড় শক্তি থাকে। তবে সরকার বদলের পর এটা অনেকটাই কমে গেছে। এখন ফুটপাত দখলমুক্তের চেষ্টা করছি। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। তবে এখন পুলিশ সেভাবে পাওয়া না যাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যকর কম হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, যারা ফুটপাতে ব্যবসা করছে, তারা আইনকানুন মানতে চাচ্ছে না।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। চাঁদাবাজির ব্যাপারে আমরা সব সময় সজাগ। বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) ফারুক হোসেন বলেন, ফুটপাতের স্থাপনা আমরা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দিচ্ছি। মানুষ যাতে চলাচলে বাধা না পায়, সে জন্য এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন